আমার নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনার ১০ বছর পূর্ণ হলো শনিবার। হত্যার ৩৩ মাস পর জেলা জজ আদালতে রায় ঘোষণা এবং ১৯ মাসে হাইকোর্টে রায় হলেও আপিল বিভাগে সাড়ে ছয় বছরেও এর নিস্পত্তি হয়নি। আপিল আদালতে ধীরগতির কারণে নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ হতাশা, ভয় ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল রেখে অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জন। তিন দিন পর বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এই হত্যামামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধান আসামি সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং র্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তা লেফটেনেন্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেনেন্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয় জেলা জজ আদালত।
আসামিদের আপিলে হাইকোর্ট বিভাগ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়। বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ঝুলে আছে মামলাটি।
মামলার বাদি নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, বিচার আদৌ হবে কি না তা নিয়ে আমরা হতাশ।
ছয় বছরেও আপিল বিভাগে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই। দ্রুততম সময়ে আপিল নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন মানবাধিকার কর্মীরা।
আপিল বিভাগে নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকবে আশা করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা নারায়ণগঞ্জবাসীর।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যামামলার রায় বাস্তবায়ন হলে প্রভাবশালী অপরাধীদের জন্য তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমসহ সাত জন অপহৃত হন। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নজরুল ইসলামসহ ৬ জন ও ১ মে সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তির চর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় আলাদা দুটি মামলা করেন।