আমার নারায়ণগঞ্জঃ
ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ বিক্রেতারা। ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডার তাঁরা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। নারায়নগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার গ্যাস বিক্রেতাদের ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশনের সর্বশেষ নির্ধারিত মূল্য তালিকা অনুযায়ী, ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডারের জন্য খুচরা পর্যায়ে গ্রাহককে দিতে হবে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এই দাম নির্ধারণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ হাজীগঞ্জ এলাকার গ্যাস বিক্রেতা আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলম হোসেন বলেন, ১২ কেজির একটি সিলিন্ডারের জন্য তিনি দাম নিচ্ছেন ১ হাজার ৭০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের কথা উল্লেখ করলে তিনি বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ঠিকই, কিন্তু সরকার তো গ্যাস দেয় না, ডিলারদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় গ্যাস নিতে হয়। এমন অবস্থায় সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করলে সিলিন্ডারপ্রতি ১০২ টাকা করে লোকসান গুনতে হবে।
ভোক্তাদের অভিযোগ, গ্যাসের দাম বাড়াতে গত কয়েক মাস থেকে কৃত্রিম একটি সংকটের কথা বলা হচ্ছে। আর এই সংকটকে পুঁজি করে গ্যাসের দাম নিজেদের মতো করে বাড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। গত মাসে ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডারের বিইআরসি নির্ধারিত দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা। কিন্তু ওই সময় ১ হাজার ৪৫০ থেকে দেড় হাজার টাকায় গ্যাস কিনতে হয়েছে। সরকার দাম বাড়ানোর আগেই বিক্রেতারা নিজেরাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
বাড়তি দামে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা গেছে বন্দর চৌধুরীবাড়ি এলাকায়ও। এই এলাকার দুটি দোকান ঘুরে দুটিতেই ১ হাজার ৮০০ টাকায় গ্যাস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এই এলাকার একটি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মো. লোকমান বলেন, গত (বৃহস্পতিবার) এই এলাকায় ১ হাজার ৯০০ টাকা দরেও ১২ কেজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে।
জিমখানার একটি দোকান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন আরিফুর রহমান। তিনি জানান, ১ হাজার ৮০০ টাকায় কিনেছেন সিলিন্ডারটি। সরকারি নির্ধারিত দামটি জানা থাকার পরও বেশি দামে সিলিন্ডার কেনার কারণ প্রসঙ্গে আরিফুর বললেন, ‘আমার তো উপায় নেই। এর চেয়ে কম দামে কেউ বিক্রি করছেন না। আমরা জিম্মি অবস্থায় আছি।’
গত কয়েক বছর থেকেই দেশে নতুন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এতে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বড় একটি অংশের মানুষ এলপিজি গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। দিন দিন বড় হচ্ছে এলপিজি গ্যাসের বাজার। কিন্ত কয়েক বছর ধরেই ভোক্তা পর্যায়ে এই গ্যাসের দাম বেড়েই চলেছে। এলপিজি মূলত একটি আমদানিনির্ভর পণ্য। এটি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
বিইআরসি জানায়, বেসরকারি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি প্রায় ১২৫ টাকা, যা এত দিন প্রায় ১০৩ টাকা ছিল। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার প্রায় ৭০ টাকা, যা এত দিন ৫৭ টাকার কিছু বেশি ছিল। সরকারি কোম্পানির সরবরাহ করা এলপিজির দাম বাড়ানো হয়নি।