আমার নারায়ণগঞ্জ:
ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশের বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। মাত্র দুই/তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে মানভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর কাওরানবাজার ও শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়ার এ তথ্য জানা যায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকে। দাম একটু বাড়ে। কিন্তু এখন ভারতের শুল্ক আরোপের ফলে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাবে।
তবে গতকাল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ভারত ছাড়াও পৃথিবীর যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভারত তাদের পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার জন্য ৪০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। এটা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের বিকল্প হচ্ছে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আনা। মিশর, তুরস্ক, চীন থেকে এটা আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষনিকভাবে সমস্যা সমাধানে আমাদের হাতে কিছু নেই। একটাই আছে, তা হলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বাজার শক্তভাবে মনিটর করতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি অমরিতা টিটুস স্বাক্ষরিত এক নোটিফিকেশনে জানানো হয়, ভারতে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটা বহাল থাকবে।
এদিকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে এখনো শুল্ক আরোপের পরের পেঁয়াজ না আসলেও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, নতুন শুল্ক কার্যকর না হলেও হিলিতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যদিও বাস্তবে দাম বেড়েছে আরো বেশি। দেশি পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরির পথে। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৫ টাকা। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ টাকা। হঠাৎ করে পেঁয়াজের এ মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত সরকারের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। পরে নতুন শুল্ক দেওয়া হলে আমদানি শুরু হয়। তবে ভারতের এই নতুন শুল্ক আরোপের কারণে পেঁয়াজের অনেকটা আমদানি কমে গেছে। গত রবিবার বন্দরের মোকামে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার আমদানি হয়ে আসা পেঁয়াজের দর এখনো পাওয়া যায়নি।
হিলি স্থল বন্দরের আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম জানান, ৪০ শতাংশ শুল্কের ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকার উপরে বাড়তি খরচ হবে। যার ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে বাংলাদেশি টাকায় ৫০-৫৬ টাকা পড়বে। এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেশি হবে।
মহারাষ্ট্রে এবছর পেঁয়াজের অতিরিক্ত ফলনের কারণে কৃষকরা খরচের অর্ধেকও দাম পাচ্ছেন না
তিনি বলেন, আগের এলসির পেঁয়াজ সীমান্তের ওপারে এসে আটকে ছিল। ভারতের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করে নতুন শুল্ক দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। না হলে প্রচণ্ড গরমে পেঁয়াজ নষ্ট হতে পারে।
হিলি স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, এটা আমাদের জন্য সতর্ক বার্তা। এখন থেকে সরকারকে ভারতের পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে। তিনি বলেন, ভারত বরাবরই আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ম ভঙ্গ করে। তারা সবকিছুই হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেয়।
হিলি স্থল বন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা হিলি পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মল্লিক জানান, গত রবিবার ভারতীয় সাতটি ট্রাকে ২১১ মেট্রিক টন এবং গতকাল সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত ১৭টি ট্রাকে ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আগের চেয়ে এখন কম আমদানি হচ্ছে।