আমার নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ ১৮ মাস বয়সী শিশু সুমাইয়া মারা গেছে।
এ নিয়ে ছয় দিন আগের ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হল।
ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান বলেন, “নারায়ণগঞ্জ গ্যাস লিকেজের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত শিশু সুমাইয়া বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে মারা গেছে। ১৮ মাস বয়সী সুমাইয়ার শরীরের ৪৪ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।”
ওই আগুনে সুমাইয়ার বাবা সোহাগ এবং মা রূপালীও দগ্ধ হয়েছেন; তারা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। সোহাগ ও রূপালী দুজনে পোশাক শ্রমিক।
এর আগে শুক্রবার রাত ১টার দিকে দগ্ধদের মধ্যে হান্নান নামে এক ব্যক্তি মারা যান বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন চিকিৎসক শাওন বিন রহমান।
তিনি বলেন, “রাত ১টা ১০ মিনিটে হান্নানের মৃত্যু হয়। শরীরে ৪৫ শতাংশ বার্ন নিয়ে তিনি এইচডিইউতে ভর্তি ছিলেন।”
হান্নানের স্ত্রী লাকীর বড় ভাই আনোয়ার হোসেন শনিবার আমার নারায়ণগঞ্জকে বলেন, “রাতে হান্নান মারা গেছেন। হান্নানের দুই মেয়ে সামিয়া ও জান্নাত কিছুটা আশঙ্কামুক্ত জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু তার স্ত্রী লাকী আর সাব্বিরের কন্ডিশন ভালো না।”
হান্নানের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরায়। তিনি পরিবারসহ সিদ্ধিরগঞ্জের ওই ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গত ৩ মার্চ রাতে রাত আড়াইটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম ধনকুন্ডা এলাকায় ইব্রাহিম খলিলের টিনসেড বাসায় ওই অগ্নিকাণ্ডে দুই পরিবারের আটজন দগ্ধ হন।
দগ্ধরা হলেন-রিকশাচালক হান্নান (৪০), তার স্ত্রী পোশাক শ্রমিক নুরজাহান আক্তার লাকী (৩০), মেয়ে জান্নাত (৩), মেয়ে সামিয়া (৯), ছেলে সাব্বির (১৬), আরেক পরিবারের পোশাক শ্রমিক সোহাগ (২৩), তার স্ত্রী পোশাক শ্রমিক রুপালি (২০) ও তাদের একমাত্র দেড় বছর বয়সী মেয়ে সুমাইয়া।
ওইদিন ভোরেই সবাইকে ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়।
দগ্ধ সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক, তা ওইদিনই জানিয়েছিলেন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক শাওন বিন রহমান।
চিকিৎসাধীনদের মধ্যে মো. সাব্বিরের শরীরের ২৭ শতাংশ, লাকীর ২২ শতাংশ, সামিয়ার ৭ শতাংশ, জান্নাতের ৩ শতাংশ, রূপালীর ৩৪ শতাংশ, এবং সোহাগের শরীর ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
ইনস্টিটিউটটির পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় আটজনের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিনের ভাষ্য, দুই কক্ষের সেমিপাকা টিনসেড ঘরের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে৷ সেখান থেকে কোনোভাবে গ্যাস লিকেজ হয় এবং তাতে ঘরের ভেতর গ্যাস চেম্বারের সৃষ্টি হয়৷ যে কোনোভাবে আগুনের স্পার্কের সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন লেগে যায়।
দগ্ধ লাকীর ভাই আনোয়ার বলছেন, আগুন যখন লাগে, তখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল। ওই অবস্থাতেই সবাই দগ্ধ হয়।